Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ

যে সব প্রজাতির মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের নয়, খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করে না, জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরে বাস করে এবং বিভিন্ন স্তরের খাবার গ্রহণ করে এসব গুণাবলির কয়েক প্রজাতির রুইজাতীয় মাছ একই পুকুরে একত্রে চাষ করাই হলো মিশ্রচাষ। আর কার্প জাতীয় মাছ বলতে দেশি ও বিদেশি রুই জাতীয় মাছকেই বুঝায়। আমাদের দেশে, দেশি কার্পের মধ্যে কাতলা, রুই, মৃগেল, কালীবাউশ এবং বিদেশি কার্পের মধ্যে সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, বিগহেড কার্প, ব্ল্যাক কার্প, কমন কার্প অন্যতম। মাছের স্বভাবজাত কারণে পুকুরের বিভিন্ন স্তরে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। সাধারণত পুকুরে ৩ স্তরে মাছ আলাদাভাবে অবস্থান করে খাবার খায়। এজন্য সেভাবে তাদের যত্নআত্তি করতে হয়। উপরের স্তরে কাতলা, সিলভার কার্প এবং বিগহেড জলাশয়ের উপরের স্তরের খাবার খায়। উপরের স্তরে এসব মাছ সবুজ উদ্ভিদকণা (ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন) এবং প্রাণিকণা (যুপ্ল্যাঙ্কটন) খেয়ে থাকে। মধ্য স্তরের রুই মাছ এ স্তরে থাকে এবং ক্ষুদ্র প্রাণিকণা, ক্ষুদ্রকীট, শেওলা খাবার খায় এবং নিম্নস্তরের মৃগেল, কালীবাউশ, মিরর কার্প বা কার্পিও, ব্ল্যাক কার্প অধিকাংশ সময়েই জলাশয়ের নিম্নস্তরে বিচরণ করে। তলদেশের ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ, শেওলা, শামুক, ঝিনুক, ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা ও প্রাণিকণা এদের প্রধান খাবার। গ্রাস কার্প ও সরপুঁটি সব স্তরেই অবস্থান করে। জলজ উদ্ভিদ, নরম ঘাস, শেওলা, ক্ষুদিপানা, টোপাপানা, হেলেঞ্চা, ঝাঁঝি এসব গ্রাস কার্পের প্রধান খাবার। ক্ষুদি পানা ও টোপা পানা সরপুঁটির প্রধান খাবার। তাই কোনো জলাশয়ের তলদেশে বেশি পরিমাণ আগাছা, ঘাস, হেলেঞ্চা জন্মালে গ্রাস কার্প ছেড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরের খাবার খায়; খাদ্য ও জায়গায় জন্য একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয় না; এরা রাক্ষুসে স্বভাবের নয়;  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো; খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে বা দ্রুতবর্ধনশীল; সহজে পোনা পাওয়া যায়; অল্প মূল্যের সম্পূরক খাদ্য খায়;  খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে চাহিদা আছে; অর্থনৈতিক মূল্য আছে; কৃত্রিম প্রজনন দ্বারা পোনা উৎপাদন করা যায়। এস বৈশিষ্ট্যে সম্পন্ন মাছ নির্বাচন করতে হবে।
চাষ পদ্ধতি :  বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশে ও উপকরণের প্রাপ্যতা, চাষির আর্থিক অবস্থা এবং জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে এক এক রকম পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। যেমন- ক. সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ; খ. আধানিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ; গ. নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ। সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ হলো কম খরচে জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে যে পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়। এ পদ্ধতিতে কম অথবা বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। পুকুরের রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা হয় না। পুকুরে বাহির থেকে কোনো খাবার ও সার দেয়া হয় না। এ পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনও অনেক কম হয়। আধানিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ হলো বৈজ্ঞানিক নিয়মে পুকুর প্রস্তুত করে, নিয়মিত সার এবং সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে, মধ্যম ঘনত্বে পোনা মজুদ করে মাছ চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবার যাতে বেশি উৎপাদন হয় তার জন্য সার ব্যবহার করা হয়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপন্ন খাবার যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তার জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে প্রজাতি নির্বাচন করে পুকরে নির্দিষ্ট ঘনত্বে  পোনা মজুদ করা হয়। এসব মাছের প্রাকৃতিক খবারের চাহিদা পূরণ না হলে বাহির থেকে চাহিদা মাফিক খাবার দেয়া হয়। আমাদের  দেশে ব্যাপকভাবে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়। আর নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ হলো অল্প জায়গায়, অল্প সময়ে, অধিক উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধি ও বাহির থেকে উন্নতমানের পরিপূর্ণ সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে উচ্চতর ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির সর্বাধিক সুযোগ ব্যবহার করা হয়। তাই অন্য দুই পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি ঘনত্বে  পোনা মজুদ ছাড়া ও নিয়মিত পানি বদল ও বায়ু সঞ্চালনের আধুনিক ব্যবস্থা করা হয়।
পুকুরের স্থান নির্বাচন খনন : পুকুর নির্বাচন ঠিকমতো করা না হলে মাছ চাষে সমস্যা হয়, মাছ ঠিকমতো বাড়ে না, মাছ চুরি হতে পারে, পোনা পরিবহনে অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে। লাভজনক চাষ করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে পুকুরের মালিকানা নিজস্ব এবং একক হওয়া; লিজ পুকুর হলে তার মেয়াদ ৫ বছরের বেশি বা দীর্ঘমেয়াদি; পুকুরটি অবশ্যই বন্যামুক্ত হওয়া; পুকুরের পানির গভীরতা ২-৩ মিটার; দো-আঁশ মাটি পুকুরের জন্য সবচেয়ে ভালো; পুকুরের তলার কাদার পরিমাণ কম হওয়া। তবে কোনো মতেই ১০-১৫ সেন্টিমিটারের এর বেশি হবে না; পুকুরের পাড়ে যেন কোনো বড় বা পাতাঝরা গাছপালা না থাকে; পুকুরটি যেন খোলামেলা ও প্রচুর আলোবাতাস লাগে। দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা সূর্যালোক যেন পুকুরে পড়ে; পুকুর ২০-৫০ শতাংশের মধ্যে হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়; আর স্থান নির্বাচনে খেয়াল রাখতে হবে খুব সহজেই যেন পোনা পাওয়া যায়; পুকুর বসতবাড়ির কাছাকাছি হলে পুকুরের ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার সুবিধা হয় মাছ চুরির ভয় থাকে না; ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কাছে হাটবাজার থাকলে ভালো হয়। পুকুর খনন বা নতুন পুকুর খনন করতে হলে যেসব বিষয়াদি বিবেচনায় রাখতে হবে তা হলো-পুকুর খননের সময় পুকুরটি যেন আয়তাকার হয়। আয়তন ৩৩ শতক থেকে ৫০ শতক হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা। পুকুরের গভীরতা এমনভাবে করা দরকার যাতে শুকনা সময়ে ১.৫-২ মিটার পানি থাকে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ কণা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পুকুরের মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি করে। পুকুরে বাতাস চলাচল করলে পানির উপরের স্তরে ঢেউয়ের মাধ্যমে পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত হয়।
পুকুর প্রস্তুতকরণ : পুরনো পুকুর হলে প্রথমে রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে। পুকুর সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত মাছ ধরে ফেলা উত্তম। চাষযোগ্য মাছ থাকলে তা অন্য পুকুরে সরিয়ে ফেলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পুকুরের তলায় পানি জমে না থাকে। পুকুরের তলায় সামান্য পানিও জমে থাকলে তাতেও রাক্ষুসে মাছ লুকিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু নানাবিধ কারণে পুকুরের পানি নিষ্কাশন সম্ভব নাও হতে পারে। পুকুর থেকে পানি নিষ্কাশন করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুনরায় পানি সরবরাহ করার মতো পানির উৎস ও ব্যবস্থা থাকে না। তাই পুকুরে ওষুধ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা ভালো। রোটেনন, চা বীজের  খৈল, তামাকের গুঁড়া এসব ওষুধ দিয়ে পুকুরের রাক্ষুসে মাছ দূর করা যায়। প্রখর সূর্যের তাপে রোটেননের কার্যকারিতা বেশি। রোটেন মাছের ওপর বিষ ক্রিয়ার মেয়াদকাল প্রায় ৭ দিন। তবে রোটেনন দিয়ে মারা মাছ খাওয়া যায়। তামাকের গুঁড়া প্রয়োগে মাছ, শামুক ও ঝিনুক মারা যায় কিন্তু চিংড়ি মরে না। এটি পরে সার হিসেবে কাজ করে। একটি পাত্রে পানির মধ্যে এক রাত ১২-১৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সূর্যালোকিত দিনে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। মাছের ওপর বিষ ক্রিয়ার মেয়াদ থাকে ৭-১০ দিন।
জাল টানা-পুকুরের পানি নিষ্কাশন এবং ওষুধ প্রয়োগ ব্যয়বহুল। এ ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে যখন পুকুরে পানি কম থাকে তখন ঘন ঘন জাল টেনে রাক্ষসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা যায়। তবে এতে অনেক সময় কাদার মধ্যে রাক্ষুসে মাছ লুকিয়ে থাকতে পারে।
আগাছা দমন-ভাসমান ও শিকড়যুক্ত পানির উপরে ভাসমান জলজ আগাছা পুকুরে সরবরাহকৃত সার গ্রহণ করে। ফলে ফাহটোপ্ল্যাঙ্কটন প্রয়োজনীয় সার গ্রহণ করার সুযোগ পায় না। এ কারণে আগাছাপূর্ণ পুকুরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন তৈরির জন্য বেশি সার প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুকুর থেকে আগাছা সম্পূর্ণ রূপে অপসারণ করা দরকার। আগাছা পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে  দেয়। পুকুর পাড় ও তলদেশ উন্নয়ন-পুকুরের তলদেশে অত্যধিক কাদা, আবর্জনা, পচা জৈব পদার্থ থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরের তলদেশ অসমান, পাড় ভাঙ্গা কিংবা ছিদ্রযুক্ত থাকলে তা মেরামত করে নিতে হবে। পুকুরের তলদেশে বিভিন্ন রোগ জীবাণু, বিষাক্ত গ্যাস থাকতে পারে। চুন প্রয়োগের মাধ্যমে এসব দূর করা যায়। তাছাড়া চুন প্রয়োগে পুকুরের পানির পিএইচ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়। পুকুরে শতাংশপ্রতি ১ কেজি কলিচুন প্রয়োগ করতে হয়। কলিচুন প্রথমে পানির সঙ্গে মিশিয়ে তারপর ঠা-া করে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে জাল টেনে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। যদি পুকুরে পানি না থাকে তা হলে পুকুরের তলদেশে চুন পাউডার করে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। পুকুরের তলদেশের মাটির প্রকারভেদ, পুকুরের বয়স ও পানির পিএইচের ওপর চুনের মাত্রা নির্ভর করে। এঁটেল মাটি, কাদা মাটি ও লাল মাটির পুকুরে চুন একটু বেশি দরকার হয়।
সার ব্যবস্থাপনা : পুকুরের পানিতে সূর্যের আলোর সহায়তায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে এক ধরনের উদ্ভিদকণা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয়। এসব উদ্ভিদকণা প্রাথমিক উৎপাদক হিসেবে পরিচিত। এগুলো রুই জাতীয় মাছের খাদ্য। প্রাণিকণাও এ মাছের প্রিয় খাদ্য। তাই উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরির জন্য সার প্রয়োগ করতে হয়। পুকুরের প্রতি শতাংশ হারে সার ব্যবহার করতে হয়। পুকুরে মাটি ও পানির গভীরতা ভেদে সারের মাত্রা কমবেশি হতে পারে। পুরনো পুকুরের তুলনায় নতুন পুকুরে জৈব সারের পরিমাণ বেশি লাগে। চুন প্রয়োগের অন্তত ৫-৭ দিন পর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা উচিত। চুন প্রয়োগের পরপরই টিএসপি সার ব্যবহার করা যাবে না। কারণ চুনের সাথে টিএসপি সারের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে বলে সারের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। টিএসপি সহজে পানিতে গলে না বলে ব্যবহারের ১০-১২ ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। শুকনা পুকুরে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হলে পুরো পুকুরে সার ছিটিয়ে লাঙল বা আঁচড়ার সাহায্যে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সার দেয়ার পর পরই পুকুরে পানি সরবরাহ দিতে হবে। তা না হলে জৈব সারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নাইট্রোজেনের কার্যকারিতা কমে যায়। পুকুরে পানি থাকলে জৈব ও অজৈব সার পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে জাল টেনে পানির সাথে সারা পুকুরে ছড়িয়ে নিতে হবে। পুকুরে সার প্রয়োগের আগে সেকি ডিস্কের রিডিং দেখতে হবে। সেকি ডিস্কের রিডিং ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে সার প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সংগ্রহ ও পোনা মজুদ : জৈব সারের মূল উপাদান নাইট্রোজেন ও ফসফরাস। শুকনো পুকুরে ব্যবহারে এসব সারের উপাদান বাতাসে চলে যায়। তাই সার  দেয়ার পরপর পুকুরে পানি সরবরাহ করতে হবে। এতে সার গলে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান পানিতে মিশতে পারবে। তবে পানি প্রবেশের সময় যাতে রাক্ষুসে মাছ কিংবা অবাঞ্ছিত মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এজন্য পানি প্রবেশর পথে ঘন ফাঁসের জাল দিয়ে আটকে দিতে হবে। পুকুরে এমন প্রজাতির মাছের চাষ করতে হবে যেগুলো একে অপরের সাথে কিংবা পরিবেশ নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা করে না। মিশ্র চাষের উদ্দেশ্যই হলো পুকুরের সব স্তরের খাদ্যকে সমানভাবে ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। সার দিলে পুকুরের বিভিন্ন স্তরে প্রাকৃতিক খাদ্যের জন্ম হয়। খাদ্যগুলো হলো উদ্ভিদকণা, প্রাণিকণা এবং পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী প্রাণিগুলো। এ প্রাকৃতিক খাদ্যমালা পুকুরে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে। মিশ্রচাষের আসল উদ্দেশ্যই হলো পুকুরের সব স্তরের খাদ্য ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন লাভ করা। তবে পুকুরে একাধিক প্রজাতির মাছ মজুদ করলেই লাভবান হওয়া যাবে না। খাদ্য ও পরিবেশ নিয়ে প্রতিযোগিতা করে না এমন দুই বা ততোধিক প্রজাতির পোনা নির্বাচন করা প্রয়োজন। পুকুরে  পোনা মজুদের আগে নিচের কাজগুলো করতে হয়Ñ
বিষাক্ততা পরীক্ষা : পুকুরে পোনা মজুদের আগে পানিতে ওষুধের বিষক্রিয়া জেনে নেয়া উচিত। বিষক্রিয়া জানার জন্য পুকুরে একটি হাপা টাঙিয়ে তার মধ্যে ১০-১৫টি পোনা ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দেখতে হবে। যদি পোনা মারা না যায়, তবেই পুকুরে পোনা মজুদ করা যাবে। বালতি বা ডেকচির মধ্যেও এ কাজটি করা যায়। পোনা মারা গেলে পানি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণে পোনা মজুদের আগেই পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করতে হবে। পুকুরের পানির রঙ হবে সবুজাভ, লালচে অথবা বাদামি সবুজ। হালকা সবুজ। হালকা সবুজ, ঘন সবুজ, তামাটে লাল বা পরিষ্কার রঙ এর পানি কার্প জাতীয় মাছ চাষের জন্যে ভালো নয়। তাই পানির রঙ ঠিক আছে কিনা তা যেসব পরীক্ষা দ্বারা দেখতে হবে তা হলো-
সেকি ডিস্ক : সেকি ডিস্ক একটি লোহার থালা। এর ব্যাস ২০ সেমি রঙ সাদা-কালো। এটি ৩ রঙের প্লাস্টিকের সুতা দ্বারা ঝুলানো থাকে। গোড়া থেকে প্রথম সুতার রঙ লাল ২০ সেন্টিমিটার, দ্বিতীয় সুতার রঙ সবুজ ১০ সেন্টিমিটার  এবং হাতে ধরার সর্বশেষ সুতার রঙ সাদা ১০০-১২০ সেন্টিমিটার।
লাল সুতা : পানিতে লাল সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পর থালার সাদা অংশ দেখা না গেলে বুঝতে হবে পুকুরে অতিরিক্ত খাদ্য আছে। তবে পানি ঘোলা থাকলেও এ অবস্থা হতে পারে। এ অবস্থায় রেণু ছাড়া, সার ও সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করা ঠিক নয়।
সাদা সুতা : সাদা সুতা পর্যন্ত নামানোর পরও থালার সাদা অংশটি দেখা গেলে বুঝতে হবে খাদ্য কম আছে। এ অবস্থায় আরও সার দিতে হবে। পুকুরে পোনা থাকলে খাদ্য প্রয়োগ বহাল রাখতে হবে। সবুজ সুতা-পানিতে সবুজ সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পর থালার সাদা অংশটি দেখা না গেলে বুঝতে হবে খাদ্য পরিমিত আছে। এ অবস্থায় রেণু ছাড়া যাবে, সার না দিলেও চলবে। সেকি ডিস্ক সূর্য উঠার পর (বেলা ১১-১২টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
মজুদ ঘনত্ব ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনা : পুকুরে পোনার মজুদ ঘনত্ব নির্ভর করে চাষ পদ্ধতির ওপর। খাদ্য ব্যবহার, পুকুরের পানি পরিবর্তনের সুযোগ এবং পানিতে অক্সিজেনের জোগানের জন্য এজিটেটর ব্যবহারের সুযোগ থাকলে অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করা যায়। সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ পুকুরে পোনা মজুদের পর থেকেই দৈনিক নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। সরিষার খৈল, চালেরকুঁড়া, গমেরভুসি, ফিশমিল এসব মাছের সম্পূরক খাদ্য। মাছের সম্পূরক খাদ্যে শতকরা ২০ ভাগ আমিষ থাকলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
গ্রাস কার্পের খাদ্য : গ্রাস কার্প ঘাসখেকো মাছ। তাই গ্রাস কার্পের খাবার সরবরাহের জন্য পুকুরে চার ফুট লম্বা, চার ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট আবেষ্টনীতে ফিডিং রিং ক্ষুদিপানা-কলাপাতা-সবুজ নরম ঘাস প্রতিদিনি সরবরাহ করতে হবে। লাঠি পুঁতে ফিডিং রিংটিকে আটকে দিতে হবে যাতে ফিডিং রিংটি একই স্থানে অবস্থান করে। ফিডিং রিংটি সব সময় পরিপূর্ণ রাখতে হবে। কেননা গ্রাস কার্প ও সরপুঁটি ক্ষুদ্রাকৃতির পাকস্থলী বিশিষ্ট। তাই ক্ষুধা পাওয়ার সাথে সাথে যাতে সামনে খাবার পেতে পারে সেজন্যে ফিডিং রিংটি সর্বদা ঘাসে পরিপূর্ণ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পুরনো বা ভাঙা রিং পরিবর্তনেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি গ্রাস কার্পের বিষ্ঠা ৫টি কার্পের খাবারের জোগান দিতে পারে।
সম্পূরক খাদ্য ব্যবস্থাপনা : পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা ভেদে সম্পূরক খাদ্যের মাত্রা নির্ভর করে। তবে সাধারণত মজুদ পুকুরে প্রতিদিন মাছের ওজনের ৩-৫ শতাংশ হারে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শীতকালে মাছের জৈবিক পরিপাকক্রিয়া কমে যায়, ফলে তাদের খাদ্য গ্রহণের মাত্রা কমে যায়। এজন্য শীতকালে মাছের ওজনের শতকরা ১-২ ভাগ হারে খাবার দিলেই চলে। খাদ্যের সাথে সরিষার খৈল ব্যবহার করা হলে পরিমাণমতো একটি পাত্রে সমপরিমাণ পানির সাথে ১২-১৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পচা সরিষার খৈলের সাথে পরিমাণমতো অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে আধা শক্ত গোলাকার বলের মতো তৈরি করতে হবে। এ খাদ্য দিনে দুইবার অর্থাৎ সকালে ও বিকালে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে সরবরাহ করতে হবে। সম্ভব হলে খাদ্য পাত্রের মধ্যে সরবরাহ করলে ভালো হয়। শুকনো গুঁড়া খাবার সরাসরি পুকুরের পানিতে ছড়িয়ে দিলে খাদ্যের অপচয় হয়। এতে মাছের ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ খাদ্যের পচন ক্রিয়ায় পুকুরের পরিবেশ দূষিত হবে।
সার প্রয়োগ : মজুদ পুকুরে সার প্রয়োগের আগে প্রাকৃতিক খাদ্যের অবস্থা জেনে নেয়া ভালো। কারণ সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ব্যবহার করলে পানি দূষণ হতে পারে। সার প্রয়োগের আগে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের অবস্থা জেনে নিতে হবে। এতে সঠিক মাত্রার সার ব্যবহার করা যাবে এবং পুকুরে পানির পরিবেশও ঠিক রাখা সম্ভব হবে। তিনভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায়। সেকি ডিস্ক ব্যবহার করতে হবে। এটি পানিতে ডুবানোর পর যদি থালাটি ২০ সেন্টিমিটার এর পর্যন্ত দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য কম আছে। সার দেয়া প্রয়োজন। গ্লাস ব্যবহার-পুকুর থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে সূর্যের বিপরীতে দেখতে হবে ক্ষুদ্র প্রাণিকণা আছে কিনা। একটি সাধারণ গ্লাসে ৮-১০টি প্রাণিকণা দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। প্ল্যাঙ্কটন নেট ব্যবহার-প্ল্যাঙ্কটন আটকানো যায় এমন নেটে ৪০ লিটার পানি চালনা করে জালে আটকানো প্ল্যাঙ্কটন একটি বিকারে সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত প্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ ২ সিসি হলে খাদ্য পর্যাপ্ত আছে বলে বুঝতে হবে। এভাবে পানি পরীক্ষার পর প্রাকৃতিক খাদ্য কমে গেলে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। দৈনিক অথবা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। সার একত্রে একটি পাত্রে ৩ গুণ পানির সাথে মিশিয়ে ১২-১৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ৯-১০টার মধ্যে সার গুলানো পানি পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
নমুনা সংগ্রহকরণ : পুকুরে মাছের বৃদ্ধি ঘটছে কিনা অথবা রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব পরীক্ষা করা এবং পুকুরে মজুদ মাছের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য মাসে অন্তত দুইবার জাল টেনে মজুদ মাছের শতকরা ১০ ভাগ ধরে তার গড় ওজন বের করতে হবে। এ গড় ওজন দ্বারা পুকুরের মজুদ মাছের সংখ্যার সাথে গুণ করে মোট মজুদ মাছের পরিমাণ নির্ণয় করে পরবতী সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োগ মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। একই সময় মাছের দেহের রোগ বালাই আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া ও জাল টানা হলে পুকুরের তলদেশে জমে থাকা মিথেন, অ্যামনিয়া ক্ষতিকর গ্যাস বের হয়ে যাবে। অন্যদিকে জাল টানার ফলে মাছ ছুটাছুটি করেবে। এতে মাছের  দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
অন্যান্য পরিচর্যা : মাছ চাষের সফলতা অধিকাংশ নির্ভর করে পুকুরে পানির পরিবেশ ঠিক রাখার ওপর। কোনো রকম পচন ক্রিয়া যেন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাই যেসব পদার্থ পানিতে পচন ক্রিয়া ঘটাতে পারে তা যাতে পুকুরে না পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরে গাছের পাতা পড়ে অনেক সময় পানির পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। এর প্রতিকারের জন্য পুকুর পাড়ের গাছের ডালপালা কেটে  ফেলতে হবে। নালা-নর্দমার বিষাক্ত পানি পুকুরে যাতে কোনোক্রমে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য কোনো উৎস থেকে আসা পানি, জাল বা অন্য কোনো পাত্র পুকুরের পানিতে ধোয়া উচিত নয়। এসবের মাধ্যমে পুকুরে রোগবালাই সংক্রমিত হতে পারে। অনেক সময় বাজার থেকে মাছ এনে রান্না কাজের জন্য পুকুরে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়, এতে অনেক সময় পুকুরে রোগ সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আংশিক আহরণ : মাছ বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাদের দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুততর হয় না। ফলে নির্দিষ্ট বয়সের পরে পুকুরে প্রতিপালন করার প্রয়োজন নেই। কাজেই পুকুরে বড় মাছ রাখা হলে অধিক লাভ পাওয়া যায় না। তাই বাজারজাতকরণ উপযোগী মাছ ধরে ফেলতে হয়। এছাড়া পুকুরে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার বেশি মাছ মজুদ রাখা হলে ছোট মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। তাই পুকুর থেকে নিয়মিত বড় মাছ ধরে ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বড় মাছ ধরে ফেললে পুকুরে বেশি জায়গা হওয়াতে ছোট মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিঘাপ্রতি কার্প জাতীয় মাছের পুকুরে ধারণক্ষমতা ২২৪ কেজি। কাজেই বিঘাপ্রতি ২২৪ কেজির বেশি মাছ আহরণ করে বিক্রয় করতে হবে। সাধারণত অতিরিক্ত মাছ আহরণের সময় পুকুরের বড় মাছ আহরণ করে ছোট মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ করে দেয়া উত্তম। তবে একমাসে যে কয়টি মাছ আহরণ করা হবে, সমান সংখ্যক সে প্রজাতির মাছের পোনা পুকুরে মজুদ করতে হবে। এভাবে আহরণ ও মজুদের মাধ্যমে মৎস্য চাষ করলে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়। নিয়মিত আংশিক আহরণের মাধ্যমে বড় মাছ ধরার ফলে ছোট মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। মাছকে পুকুরে বেশি দিন না রেখে বছর শেষে পুরাপুরি আহরণ করে পরবর্তী বছরের জন্য পুকুর তৈরি করা ভালো। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পুকুরে যখন পানি কম থাকে তখন মাছ ধরে ফেলতে হবে।

মো. রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া*

* রহমতপুর আবাসিক এলাকা, চাঁদপুর


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon